এম আব্দুল্লাহ ::
আজকের চোখ ধাঁধানো এই দুনিয়ার ভোগের বস্তু পেতে তরুণ যুবকেরা উন্মাদ, মরিয়া হয়ে পড়েছে। একটা বাইক, পকেট ভর্তি টাকা, একটা নারীর মাঝেই যেনো তারা সকল সু
খ-শান্তি খুঁজে পেতে চায়। জীবন মানেই দুনিয়াকে ভোগ করো। আর যখনই দুনিয়ার কোন ভোগের বস্তু আজকের তরুণেরা অর্জন করতে পারে না। তখন সে আফসোস করতে থাকে। হায় আমার যদি একটা বাইক থাকতো, হায় আমার তো ব্যাংক ভর্তি টাকা নেই! এভাবে দুনিয়ার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে আফসোস করতে থাকে। তরুণ তোমার জন্য বড্ড বেমানান দুনিয়ার কোন প্রাপ্তি নিয়ে আফসোস করা। তুমি হলে সকল সৃষ্টির সেরা, তোমার সাথে কি মানায় তোমার চেয়ে কম মূল্যের জিনিসের জন্য আফসোস করা.?
যে ভাইয়ের ভালো মানের বাইক (R15,CBR) আছে, বাইকের সাথে পিক তোলার জন্য কিংবা টিকটক করার জন্য ভাইয়ের সঙ্গে/পিছনে ঘুরতে দেখা যায়। দামি বাইকের সাথে পিক তুলতে হলে তো বাইকার ভাইয়ের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক থাকতে হবে। সেই আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী করতে গিয়ে সবকিছু করতে রাজি.! নিজের Ideology ভুলে সেই দামি বাইকওয়ালা ভাইয়ের পিছে পিছে ঘুরতে দেখা যায়। শুধুমাত্র দামি বাইকের সাথে পিক তোলার জন্য নিজের Ideology কে ভুলে যান। দামি বাইকওয়ালা ভাইয়ের চরিত্রের কথা আর নাই বললাম। আবার উনি বাইকার ভাইয়ের সার্টিফিকেট ও দেন যে ভাই খুব আন্তরিক,সাদা মনের,স্বচ্চ একজন মানুষ.! অথচ সেই ভাইয়ের আদর্শ হচ্ছে নারীদের সাথে অবাধ মেলামেশা, কলেজের মেয়েদেরকে ডিস্টার্ব দেয়া, রাতে গাজা টানা, নৈতিকতার লেশমাত্র নেই। সবকিছু জানা সত্ত্বেও আপনি শুধু দুনিয়াকে উপভোগ করার জন্য সেই ভাইয়ের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে ভাইয়ের চরিত্র তোমাকে প্রভাবিত করে ফেলে। তুমি চরিত্রবান, নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ ছিলে, কিন্তু ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে ভাইয়ের গুন গুলো অর্জন করে নিজের মধ্যে যে ভালো গুন গুলো ছিল তা হারিয়ে ফেলো। তুমি যতটুকু ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে, এখন আর তা মেনে চলা সম্ভব হয় না! পরিশেষে তুমি বাইকওয়ালা ঐ ভাইটার মতো বখাটে হয়ে যাও। অনেককেই স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়-
"পৃথিবীর সবকিছুর সাথে আপোষ চলে, কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের সাথে আপোষ চলে না। সব সহ্য করা যায়, আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগলে, ওটা আর সহ্য করা যায় না। ভেতরটা তখন নিঃশব্দে মরে যায়। তাকে বাঁচানো যায় না৷ শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায় না।"
তো ভাই দামি বাইকওয়ালা ভাইয়ের পিছে ঘুরার সময় কি আত্মসম্মানবোধের কথা ভুলে যাও!
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজেকে চরিত্রবান হিসেবে ধরে রাখা। মেয়েদের ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা হবে। বর্তমানে তরুণদেরকে দেখা যায় একাধিক মেয়েদের সাথে রিলেশন করাই যেনো তার মূল টার্গেট। সেই টার্গেট ফিল আপ করার জন্য একধরনের মুখোশ পরে; মুখোশটা কিরকম? মুখোশটা হচ্ছে- অনলাইন কিংবা অফলাইনে নিজের সিলেক্টিভ একটা অংশ রঙচঙ লাগিয়ে মেয়েদের সামনে উপস্থাপন করা। মেয়েদের সামনে দিয়ে হেটে গেলে ভাব মারা, স্টাইলিশ সাজা, রঙঢঙ করা আরও কতকিছু।
ইবনুল জাওযী রহ. ছিলেন অসাধারণ একজন আলেম। তার গ্রন্থগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে সাড়া পৃথিবীতে পড়ানো হচ্ছে। তার অসংখ্য বিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে একটি হলো- যাম্মুল হাওয়া। হৃদয়ঘটিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ক্লাসিক্যাল মাস্টারপিস এই গ্রন্থে। তিনি বলেন- "প্রেমিকরা সাধারণত যৌন কামনা থেকে নিজেদের মন-মগজকে সংযত করতে না পারার ক্ষেত্রে জানোয়ারদের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাদের যৌন উত্তেজনা কখনও প্রশমিত হয় না, পরিতৃপ্তির বদলে সর্বদা অতৃপ্তিই থেকে যায়, ফলে তা আরও বৃদ্ধি পায়। তারা কুকর্মের লাঞ্ছনায় জড়িয়ে পড়ে আরও ঘৃণিত হয়ে যায়।" (১)
তিনি আরও বলেন- "প্রেম-ভালোবাসার ক্ষতি জানার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, এটা হল হৃদয়ের বন্দীদশা। প্রেম-ভালোবাসা অসম্মান, অপদস্থতা ও কষ্টের দরজা।" (২)
বাইক/বাইকওয়ালা ভাই,মেয়েদের,দুনিয়ার পিছনে ছুটার কারণ কি? এর কারণ হলো তোমার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ভুলে গেছো। তোমাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত ও তার দ্বীনকে বিজয় করার জন্য। দামি বাইকের,মেয়েদের,দুনিয়ার পিছনে না ছুটে রবের দেয়া নির্দেশিত পথে চল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি আমার দাসত্ব করার জন্য।' (৩)
তোমার আদর্শ তো খালিদ বিন ওয়ালিদ, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, তারিক বিন যিয়াদ হওয়ার কথা ছিল। যখন ইসলাম এবং মুসলমান কে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির বানানো হচ্ছে, আর তুমি এখনও বাইকের,মেয়েদের, দুনিয়ার পিছনে রয়ে গেলে.!
তথ্যসূত্রঃ
(১) ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম ভালোবাসা নামে যাম্মুল হাওয়া গ্রন্থটি অনুদিত হয়েছে বাংলায়, দারুস সালাম বাংলাদেশ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা- ২৬।
(২) ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম ভালোবাসা, ইবনুল জাওযী রহ., দারুস সালাম বাংলাদেশ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা- ২৬৫।
(৩) সুরা যারিয়াত- ৫১:৫৬।